রান্নার স্বাদ বাড়াতে
* মাছ রান্না করে হাতের কাছে কাঁচা ধনিয়া পাতা থাকলে তা কুচি করে কেটে বিছিয়ে দিন, স্বাদ দুইশত গুন বেড়ে যাবে।
* ডালে বাগার দিতেই হবে, রসুন কুচি তেলে ভেজে ডালে দিয়ে দিতে হবে।
* মাংশ জাতীয় রান্না করে শেষে বেরেস্তা (পেঁয়াজ কুচি ভাজি) দিয়ে দিন। স্বাদ বেড়ে যাবে।
গৃহিণীর সতর্কতা
* ডিম সিদ্ব করতে পানিতে সামান্য লবন দিন। ডিম খেতে সুস্বাদু হবে। গরমাবস্থায় ডিম ছিলবেন না, ঠান্ডা করে ছিলুন এতে খোসায় লেগে ডিম নষ্ট হবে না।
* চুলায় হাড়ি পাতিলে ঢাকনা থাকলে তা খালি হাতে ধরবেন না। গরম থাকলে হাত পুড়ে যেতে পারে।
* ভর্তা বানাতে মরিচ খালি হাতে ঢলবেন না, হাত জ্বলে আপনি কষ্ট পেতে পারেন।
* যে কোন মাছ ভাঁজতে কড়াই থেকে একটা নিদিষ্ট দূরে থাকুন। মাছে পানি থাকলে কিংবা ফুটে আপনার গায়ে/চোখে তৈলের চিটকা পড়তে পারে। সাবধানে কাজ করবেন। দূর থেকে নাড়ুন।
* শুকনা মরিচ ভাজলে বা পুড়লে বাতাসে একটা ঝাঁজ তৈরী হয় এতে হাচি, কাচি এসে নাস্তা নাবুদ হয়ে যেতে পারেন। ভাজার সময় রান্নাঘরের দরজা জানালা ভাল করে খুলে দিন। প্রয়োজনে এডজাষ্টার ফ্যান থাকলে তা চালিয়ে দিন।
রান্নার সময় খেয়াল রাখবেন
* ভাজিতে তেল বেশী পড়ে গেলে ভাজি কড়াই, প্যানের এক দিকে সরিয়ে কড়াই/প্যান কাত করে রেখে দিবেন ১৫/২০ মিনিট। তারপর ঐ কাত করা অবস্থাতেই ভাজিগুলো বাটিতে নিয়ে নিবেন। আর ঐ বাড়তি তেল পরে অন্য ভাজিতে ব্যাবহার করতে পারবেন। মাংসের তরকারীতেও যদি তেল বেশী হয়, উপর থেকে চামচ দিয়ে তেল উঠিয়ে পরে ভাজিতে ব্যাবহার করলে ভালো লাগে।
* এলাচ সম্পুর্ণ গুড়ো করে ব্যবহার করা ভাল। গোটা এলাচ কামড়ে পড়লে খাওয়ার মজাই নষ্ট হয়ে যায়। আবার এলাচ ভালো করে না ফাটালে তো সুগন্ধই হবেনা।
* সবজীর রং ঠিক রাখতে ঢাকনা দিয়ে জ্বাল না দেয়াই ভাল। আর কিছু সব্জী আছে যাদের সামান্য সিদ্ব করে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে কিংবা বরফ কুঁচিতে রাখলে রান্নার পরও রং ঠিক থাকে।
* কিছু ভাজিতে কড়াইতে তেল গরম হলে যা দেবেন তার সাথে সামান্য লবণ দিয়ে দিন, তেলের ছিটকা উঠবে না।
* ডালের মজা জ্বালে! অর্থাৎ যত বেশি সময় জ্বালানো হবে স্বাদ বেড়ে যাবে ততই। [এই টিপসটি দিয়েছেন খুলনা থেকে আমাদের প্রিয় ব্লগার নাজমুল হুদা ভাই]
* যদি তেলাপিয়া মাছে কোন গন্ধ থাকে তবে তেলাপিয়া মাছ হলুদ ও ভিনিগার/লেবুর রস মাখিয়ে মিনিট ১৫ রেখে ধুয়ে নিলে গন্ধ থাকেনা।
* লাল সর্ষে তিতা বা ঝাজ বেশী হয়। হলুদ সর্ষে ব্যাবহার করলে তিতা হয়না। আরেকটি কথাঃ সর্ষে বাটার সময় লবন আর কাচামরিচ এক সাথে বাটলে তিতা হয়না।
ডাল রান্নার টিপস
ডাল:
ভাতের পরই চলে আসে ডালের কথা। মসুরের ডাল সিদ্ধ হতে যে সময় লাগে একেও তিন ভাগের এক ভাগে কমিয়ে আনতে পারেন। শুধু একটা ছোট কাজ করতে হবে। ডাল সিদ্ধ বসানোর চার ঘন্টা আগে ডাল ধুয়ে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। আমি যেটা করি, অফিসে যাওয়ার আগে ডাল ভিজিয়ে রেখে যাই, দুপুরে অফিস থেকে এসে রান্না করি। দশ মিনিটের মধ্যে ডাল সিদ্ধ হয়ে যায়। এরপর পেঁয়াজ-মরিচ-রসুন তেলে ভেজে বাগার দিয়ে দিলেই হল। পনের মিনিটে ডাল রান্না শেষ। মনে করে ডাল সিদ্ধ করার সময় পানি কমিয়ে দিতে হবে। নয়তো পানি শুকাতেই সময় লেগে যাবে। চার ঘন্টা ভিজানোর সময় না থাকলে প্রেসার কুকারেও ডাল সিদ্ধ করা যায়, তবে ওতে কেন যেন ডালের স্বাদটা ঠিক আসে না।
মাংস রান্নার টিপস
গরু/খাসীর মাংস:
গরু/খাসীর মাংসের জন্যও সেই প্রেসার কুকারই ভরসা। তবে দুইভাবে রান্না করা যায়। একটা হল মাংস আগে প্রেসার কুকারে সিদ্ধ করে চর্বির পানিটুকু ফেলে দিয়ে এরপর মশলা কষিয়ে রান্না করা যায়। অথবা আগেই মশলা দিয়ে কষিয়ে নিয়ে এরপর পানি দিয়ে প্রেসার কুকারে বসিয়ে দেয়া যায়। প্রথমটায় তেল-চর্বি কম থাকে, দ্বিতীয় পদ্ধতিতে কষানোটা ভালো হয়। আমি আগে প্রথম পদ্ধতিতে করতাম, এখন দ্বিতীয় পদ্ধতিতে মাংস রান্না করি। প্রেসার কুকারে মাংস ভালো মত সিদ্ধ হতে কমপক্ষে বারোটা লম্বা সিটি বাজতে হবে।
কেউ কেউ মুরগীর মাংসও প্রেসার কুকারে করে। আমি এখনও চেষ্টা করে দেখিনি। মুরগীটা একেবারে ভুনা না হলে আমার ভালো লাগে না, তাই কড়াইতেই করি। আজকাল তো রাইস কুকারের মত কারি কুকারও পাওয়া যায়। এমনটা হলে গ্যাস আরও অনেকখানি সাশ্রয় করা যায়। তবে আমাদের বিদ্যুতের এত সমারোহও নেই, আর তার উপর বিদ্যুৎ উৎপাদনের পিছনেও সেই গ্যাসই লাগে। তাই আমি আসলে নিয়মিত কুকার ব্যবহারে খুব একটা আগ্রহী নই। জরুরী ভিত্তিতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
সাধারণ কিছু টিপস
-দেশলাই খরচ করতে কোন কার্পণ্য করা যাবে না। যতবার রান্না শেষ হবে, সাথে সাথে চুলার আগুন নিভিয়ে ফেলতে হবে। এমন কি দুই মিনিটের বিরতিতে পরবর্তী রান্না বসাতে চাইলেও।
-ফ্রিজে খাবার রেখে গরম করে খেতে যদি অরুচি না থাকে তো একবারে বেশি করে রান্না করে রেখে দিন। পরে শুধু গরম করে করে খাবেন। প্রতি বেলায় রান্না করা লাগবে না, গ্যাস খরচ কম হবে।
রান্নাঘরের টুকিটাকি
► পাতলা কাঁচের থালা পরিষ্কার করার জন্য কখনো পানিতে ডোবাবেন না। ফেটে যেতে পারে। ভিনেগার দিয়ে পরিষ্কার করলে ঝকঝকে থাকবে।
► স্টেনলেস স্টিলের প্লেটের গায়ে লেগে থাকা দাগ পরিষ্কার করতে চাইলে একটুকরো সাদা কাপড় ভিনেগারে ডুবিয়ে ঘষলেই প্লেট পরিষ্কার হয়ে যাবে।
► কাঁচের প্লেটের দাগ টুথপেস্ট দিয়ে ঘষে দিলে সহজেই উঠে যায়।
► কিসমিসের গায়ে ছাতা ধরা আটকাতে হলে কিসমিসগুলোকে ময়দার মধ্যে নাড়াচাড়া করে নিন। পরে ধুয়ে নিলেই ব্যবহার করা যাবে।
► মাছ কাটতে গেলে অনেক সময় কাঁটা বিধে যায়। প্রথম কাঁটা বেধা জায়গায় লবণ দিন। ব্যথা কমবে। কাঁটা তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসবে।
► পাটায় ছোট ছোট গর্তে মসলা জমে থাকলে পরিষ্কার হয় না সহজে। কিছুটা বালি দিয়ে বাটুন। পাটা পরিষ্কার হয়ে যাবে।
► আমরা প্রায়ই নানারকম রান্না করি কলাতায় মুড়ে। যেমন ইলিশ মাছের পাতুরি। কাঁচা পাতা ব্যবহারের সময় প্রায়ই ফেটে যায়। কলার পাতাটি আগে আগুনে সেঁকে নরম করে নিন পাতা ফাটবে না।
► কোনো অনুষ্ঠানে যদি ভুলবশত প্রয়োজন অতিরিক্ত লেবু কাটা হয়ে যায় তবে অতিরিক্ত লেবুগুলোকে লবণের ডিশে রেখে দিন। বেশ কয়েক দিন ভালো থাকবে।
► ফ্রিজে একটি পাতিলেবু টুকরো করে কেটে রেখে দিন। ভেতরের যাবতীয় গন্ধ লেবু শুষে নেবে, ফ্রিজ থাকবে পরিষ্কার।
► কোনো কারণে বেশি খাওয়া হয়ে গেলে অন্তত আধঘন্টা ধরে এক গ্লাস গরম পানি একটু একটু করে খাবেন। এতে হজম হয়ে যাবে।
► বাদামের খোসা ছাড়াতে গেলে প্রথমে বাদামগুলোকে পাঁচ মিনিট ফুটন্ত পানিতে রেখে দিন। পানি ঝরিয়ে নিয়ে দেখুন সহজেই খোসা উঠে আসবে।
► রান্নার সময় সবজির গন্ধ দূর করতে হলে সামান্য পাতিলেবুর রস বা চিনি মিশিয়ে দিবেন।
► চা করার পর চায়ের পাতা ফেলে না দিয়ে বাড়ির মেঝেতে ঘষুন। মেঝে চকচকে হয়ে যাবে।
► সরাসরি জ্বারে দিয়ে রুটি না সেঁকাই ভালো। পুরোনো কাপড়ের টুকরো তৈরি করে, তাওয়ার উপরে রাখা রুটির চারপাশে ওই টুকরো দিয়ে চাপ দিলেই রুটি ফুলে উঠবে।
► অনেক সময় টক দই, বিশেষ খরে পুরোনো হয়ে গেলে বড্ড বেশি টক হয়ে যায়। সে ক্ষেত্র দই কাপড়ের টুকরোয় বেঁধে বেশ খানিকণ ঝুলিয়ে রাখতে হয়। তাতে দইয়ে যে পানি থাকে তা ঝরে যাবে। এবার প্রয়োজনীয় মাত্রায় দুধ মেশান। টকদই টাটকা ও মিষ্টি হয়ে যাবে।
► ঘিয়ের গন্ধ অক্ষণ রাখতে হলে গিয়ের পাত্রে একটু আখের গুড় রেখে দিন।
► আলু সেদ্ধ করার পর এ পানি দিয়ে যদি প্লেট ধোওয়া যায় তাহলে প্লেট ঝকঝকে হবে।
► টাটকা পেঁপের ঘন কষ একটা কাঁচ বা ছোট প্লেটে রাখুন। কষ জমে গেলে, কষের সমপরিমাণ লবণ মিশিয়ে রোদে দিন। শুকিয়ে গেলে গুঁড়ো করে মুখ বন্ধ শিশিতে রেখে দিন। মাংসের পরিমাণ বুঝে ১/২ চা চামচ বা ১ চা চামচ গুঁড়ো কষ কাটা মাংসে ভালো করে মেখে ঘণ্টাখানেক ঢেকে রাখুন। ঘন্টাখানেক পর মসলা ইত্যাদি দিয়ে যেমন মাংস হয় রান্না করুন। তাড়াতাড়ি মাংস সেদ্ধ হবে। যে সময় বা যে জায়গায় হাতের কাছে কাঁচা পেঁপে নেই অথচ মাংস তাড়াতাড়ি রান্না দরকার তখন ওই গুঁড়োটি কাজে লাগে।
► সব রকম ফলই কেটে স্টিলের বাঁটিতে রাখা ভালো, তাহলে কাটা ফল কাল হয় না।
► টিনে বা কৌটায় চাল রেখে উপরের দিকে ১-২ আঙ্গুল খালি রেখে নিমপাতা খালি জায়গায় ভালো করে দিয়ে দেবেন। নিমপাতা ছায়ায় রেখে রস শুকিয়ে নেবেন।
►সরিষা বাটার সময় নুন, কাঁচামরিচ ও সামান্য রসুন দিয়ে নিন। এতে সরিষা তিতা হবে না।
► কাঁচামরিচের বোঁটা ফেলে ঠোঙ্গায় করে ফ্রিজে রাখুন। অনেক দিন ভালো থাকবে।
►ডিম সেদ্ধ করার সময় সামান্য নুন বা সিরকা ঢেলে দিন। সেদ্ধ ডিমের খোসা ছাড়ানো সহজ হবে।
►গরম মসলা গুঁড়া করার আগে টেলে নিন। পরে গুঁড়া করুন। এতে মসলার গন্ধ ভালো হবে।
►এলাচ গুঁড়া করার সময় খানিকটা চিনি দিয়ে নিন।
► বেগুন কেটে নুন গোলা পানিতে ১৩ মিনিট চুবিয়ে রাখুন। বেগুনের তিতাভাব চলে যাবে।
► খুশখুশে বা শুকনো কাশি ভালো করতে চাইলে ডাসা পেয়ারা চার ভাগ করে কেটে ছুরির আগায় লাগিয়ে চুলার ওপর ধরুন। চার পাশ লাল করে শেকা হলে মধু, বিট লবণ ও গোল মরিচের গুঁড়া দিয়ে মেখে পর পর ৭ দিন খান। কাশি ভালো হয়ে যাবে।
►পালং শাক ধোয়ার পর কেটে হলুদ গোলা পানিতে ডুবিয়ে দিন। ১০ মিনিট পর তুলে সাদা পানিতে একবার ধুয়ে নিন। শাকের তিতাভাব থাকবে না।
► পিঁপড়া আসে এমন ছিদ্রতে কেরোসিন তেল স্প্রে করে তার ওপর চুন গুঁড়া করে ছড়িয়ে দিন রান্না হাঁড়ি পাতিল রাখার টেবিল বা তাকের চারপাশে চুন হলুদ ও
লবণের মিশ্রণ ছড়িয়ে রাখুন। পিঁপড়ার উপদ্রব বন্ধ হবে।
►কাবুলি ছোলা বা মটর ভিজানোর সময় সামান্য খাবার সোডা মিশিয়ে দিন। এতে ছোলা বা মটর তাড়াতাড়ি নরম হবে।
No comments:
Post a Comment